যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে শিশুদের সুরক্ষা আইন । কোনটা অপরাধ বলে গন্য হবে ? সাজা কি ? ভিডিওতে শিশুকে ব্যাবহার করা যাবে কি ? জেনে নিন
শিশুর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ গুলি কিভাবে ভাগ করা হয়েছে ?
শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধগুলিকে মোটামুটি পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে ঃ
(১) ভেদক যৌন প্রহার; (২) গুরুতর ভেদক যৌন প্রহার; (৩) যৌন প্রহার; (৪) গুরুতর যৌন প্রহার ; (৫) যৌন হেনস্থা
শিশুর সাথে যৌন ক্রিয়া করলে কি সাজা হতে পারে ?
যখন কোন ব্যক্তি তার নিজের বা অন্য কোন ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ বা শরীরের অন্য কোন অংশ বা কোন বস্তু শিশুর যোনি, মুখে, মূত্রনালীতে বা মলদ্বারে বলপূর্বক প্রবেশ করায় অথবা শিশুটির শরীরের কোন অংশ এমনভাবে চালনা বা ব্যবহার করে যাতে ঐ বলপূর্বক প্রবেশ ঘটে অথবা কোন শিশুকে ঐ ব্যক্তির বা অন্য কোন ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ, মূত্রনালী বা মলদ্বারে মুখ দিতে বাধ্য করে বা ঐ ব্যক্তি শিশুর পুরুষাঙ্গ, যোনি, মূত্রনালী বা মলদ্বারে মুখ দেয়, তখন ভেদক যৌন প্রহার (Penetrative Sexual Assault) সংঘটিত হয়। এই অপরাধের সাজা কমপক্ষে সাত বছর সর্বাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানাও ।
শিশুর সাথে যৌন অপরাধ করলে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে
ভেদক যৌন প্রহার বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে গুরুতর বা প্রকুপিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বিশেষ ক্ষেত্রগুলিকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে-- অপরাধী কোন ব্যক্তি ও অপরাধ কোন পরিস্থিতিতে ?
ব্যক্তির দিক থেকে--কোন পুলিশ অফিসার; সশস্ত্র বা সুরক্ষা বাহিনীর কোন সদস্য; সরকারি আধিকারিক ; সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক বা কর্মী; শিশু-পরিষেবা নিযুক্ত কোন সংস্থার পরিচালক বা কর্মী বা সকলকে; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা কর্মী শিশুর সংগে আত্মীয়তায় সম্পর্কিত কোন ব্যক্তি পরিস্থিতির দিক থেকে- যূথবদ্ধভাবে ভেদক যৌন প্রহার; মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র; আগুন, তপ্তপদার্থ বা ক্ষয়কারী পদার্থ ব্যবহার; শিশুকে সাংঘাতিকভাবে আহত করা বা তার শারীরিক ক্ষতি করা বা তার যৌনাঙ্গে ক্ষত সৃষ্টি করা; শিশুকে স্থায়ীভাবে জড় করে দেওয়া বা মানসিকভাবে অসুস্থ করে দেওয়া বা শিশুর স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজে তাকে অপারগ করে দেওয়া; শিশুকে অন্তঃসত্ত্বা করা; শিশুর শরীরে HIV বা অন্য জীবনসংশয়ী রোগ বা সংক্রমণ তৈরি করা; শিশুর শারীরিক জড়তা বা মানসিক পঙ্গুত্বের সুযোগ নেওয়া; শিশুকে বারবার ভেদক যৌন প্রহারের শিকার করা; বারো বছর বয়সের কম শিশুকে ভেদক যৌন প্রহার করা; শিশুর সংগে বিশ্বাসের সম্পর্ক আছে, এমন পরিস্থিতি; শিশু অন্তঃসত্ত্বা জেনেও তার সংগে ভেদক যৌন সম্পর্ক; কোন সাম্প্রদায়িক বা উপদলীয় হিংসায়; যৌনসম্পর্কের পর হত্যার চেষ্টা; ঘটনার পর শিশুকে নগ্ন হয়ে জনসমক্ষে হাঁটতে বাধ্য করা; পুনঃ পুনঃ একই অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি ন্যূনতম দশ বছর সর্বাধিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা।
যৌন ইচ্ছা নিয়ে শিশুর শরীর কেবলমাত্র স্পর্শ করলেও সেটা শাস্তিমূলক অপরাধ
যদি কোন ব্যক্তি যৌন উদ্দেশ্যে কোন শিশুর যোনি, পুরুষাঙ্গ, মলদ্বার বা বুক স্পর্শ করে অথবা শিশুকে ঐ ব্যক্তির বা অন্য কোন ব্যক্তির যোনি, পুরুষাঙ্গ, মলদ্বার বা বুক স্পর্শ করতে বাধ্য করে অথবা যৌন উদ্দেশ্যে শারীরিক সম্পর্কে জড়িত অন্য কোন কাজ করে (কিন্তু ভেদক যৌন প্রহার নয়), সে যৌন প্রহারের অপরাধে দোষী হবে। এই অপরাধের জন্য অন্তত তিনবছর সশ্রম বা বিনাশ্রম সর্বাধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা হবে।
যৌন প্রহার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে গুরুতর যৌন প্রহার গণ্য হবে। গুরুতর ভেদক যৌন প্রহারের (aggravated penetrative sexual assault) মতো এই অপরাধ-ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক বা পরিস্থিতি-কেন্দ্রিক হতে পারে। তবে একাধিক ব্যক্তি শিশুকে গুরুতর যৌন প্রহার করলে ঐ কাজ গুরুতর ভেদক যৌন প্রহার হিসাবে গণ্য করা হবে এবং সেই মোতাবেক সাজা হবে। গুরুতর যৌন প্রহারের শাস্তি হল ন্যূনতম পাঁচ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম সর্বাধিক সাত বছর কারাদণ্ড,সংগে জরিমানা-ও।
শিশুকে অশ্লীল ছবি / ভিডিও দেখানো বা অশ্লীল ইশারা করলে সেটা শাস্তিমূলক অপরাধ
যদি কোন ব্যক্তি যৌন উদ্দেশ্যে (১) শিশু দেখতে বা শুনতে পায় এমন শব্দ বা ইঙ্গিত বা অঙ্গভঙ্গি বা কোন ইঙ্গিতবহ বস্তু বা শরীরের কোন অংশ ব্যবহার করে, অথবা (২) ঐ ব্যক্তি বা অন্য কোন ব্যক্তির সামনে শিশুকে তার শরীর বা শরীরের কোন অংশ দেখাতে বাধ্য করে, অথবা (৩) অশ্লীল বিবরণ বা ছবি শিশুকে দেখায়, অথবা (৪) বারবার বা অনবরত প্রত্যক্ষভাবে বা কোন বৈদ্যুতিন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিশুকে অনুসরণ, লক্ষ্য বা যোগাযোগ করে, অথবা (৫) কোন বৈদ্যুতিন বা চিত্রনাট্য মাধ্যমে শিশুর শরীরের কোন অংশ বা শিশুর যৌনক্রিয়ার ছবি প্রকাশ করার ভয় দেখায়, অথবা (৬) কোন শিশুকে ভয় বা লোভ দেখিয়ে বা উপহার দিয়ে অশ্লীল উদ্দেশ্যে ফুসলে নেয়, সে শিশুকে যৌন হেনস্থার অপরাধে দোষী হবে। এই অপরাধের সাজা তিনবছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুকে অশ্লীলভাবে দেখালে সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ
উপরের পাঁচটি অপরাধ ছাড়াও এই আইনে আরো দুটি অপরাধ হতে পারে। প্রথমটি হল শিশুকে অশ্লীলভাবে যে কোন ধরণের মাধ্যমে ব্যবহার করা, তা বিজ্ঞাপনেই হোক বা টেলিভিশন চ্যানেলের কোন অনুষ্ঠানেই হোক বা ইণ্টারনেটে হোক বা কোন মুদ্রণমাধ্যমে বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে হোক, বা তা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য হোক বা ছড়িয়ে দেবার জন্য হোক, তার উদ্দেশ্য যদি যৌন সন্তুষ্টি, তার শাস্তি হল পাঁচবছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড থেকে সাত বছর পর্যন্ত ও জরিমানাও। এই অপরাধের সংগে যদি অন্য যৌন অপরাধ থাকে, সেই অনুযায়ী সাজা হবে, এমনকী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে, সংগে জরিমানা। আবার, যদি কেউ বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ঐ অশ্লীল বস্তু সঞ্চয় করে, তার তিনবছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই শাস্তি হবে। দ্বিতীয়টি হল, যৌন অপরাধে সহায়তা বা সহযোগিতা করা বা প্ররোচনা দেওয়া। এই অপরাধের শাস্তি মূল অপরাধের সমান।
শিশুর উপর যৌন অত্যাচার / হেনস্থা বা অনুরূপ অপরাধ হলে কোথায় জানাবেন ?
যে কোন ব্যক্তি, শিশুর নিজেও, এই অপরাধের বা তা সংঘটনের সম্ভাবনার কথা বিশেষ জুভেনাইল পুলিশ বা স্থানীয় পুলিশকে (থানা) জানাতে পারে। সমস্ত ধরণের মাধ্যমে হোস্টেলের হাসপাতালের, ক্লাবের ও তার কর্মীর উপর আইনত দায়িত্ব ন্যস্ত আছে, যাতে শিশুর প্রতি যৌন অপরাধের সংবাদ তারা পুলিশকে জানায় । নালিশ না জানানো বা তা নথিভুক্ত না করা এই আইনে শাস্তিযোগ্য। এই আইনের অধীনে মামলাগুলির বিচার হবে প্রতি জেলায় একটি বিশেষ আদালতে। এই আইনে আরো বলা আছে যে, এই আইনের ৩, ৫, ৭ ও ৯ ধারায় বিচারকালীন বিশেষ আদালত পূর্বানুমান করবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধটি সংঘটিত করেছেন। আদালত আরো পূর্বানুমান করবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধমূলক মানসিক অবস্থা ছিল । এই আইনে মামলা চলাকালীন নির্যাতিত শিশু যাতে অভিযুক্তের সংগে প্রত্যক্ষ সাক্ষাতে না আসে তা দেখার দায়িত্ব বিশেষ আদালতের।
কোন মন্তব্য নেই: