চিকিৎসাভিত্তিক গর্ভপাত আইন, ১৯৭১
সাধারণভাবে গর্ভপাত করালে যাঁর গর্ভপাত করানো হচ্ছে তাঁর বিভিন্ন ধরণের অসুস্থতা/কষ্ট দেখা দিতে পারে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ও জীবনহানির আশঙ্কা থাকলে অথবা চিকিৎসক প্রয়োজন বোধ করলে উপযুক্ত চিকিৎসক দ্বারা গর্ভপাত ঘটানো যেতে পারে। এই মর্মে চিকিৎসাভিত্তিক গর্ভপাত আইন, ১৯৭১, প্রণয়ন করা হয়।
এই আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :
এই আইন জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য বাদে ভারতের সব রাজ্যে প্রযোজ্য।
কে গর্ভপাত করাতে পারেন :
এই আইনের শর্ত মেনে গর্ভপাত ঘটালে ভারতীয় দন্ড সংহিতা বা কোনও চালু আইন অনুযায়ী কোনও চিকিৎসক দোষী সাব্যস্ত হবেন না । শুধুমাত্র রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকরাই গর্ভপাত করাতে পারেন।
যে যে ক্ষেত্রে গর্ভপাত করা যায় ঃ
•সাধারণতঃ গর্ভাবস্থার বারো সপ্তাহ পার হয়নি এমন অবস্থায় কেবল একজন রেজিষ্ট্রিভুক্ত চিকিৎসক গর্ভপাত ঘটাতে পারেন
• বারো সপ্তাহ পেরিয়েছে কিন্তু কুড়ি সপ্তাহ পার হয়নি এই অবস্থায় অন্তত পক্ষে দুজন চিকিৎসকের যদি এই অভিমত হয় নিম্নলিখিত তিনটি ক্ষেত্রে গর্ভপাত ঘটানো আবশ্যক তাহলে সেহ ক্ষেত্রগুলিতে গর্ভপাত করা যাবে :-
• এই গর্ভাবস্থা যদি চলতে থাকে তবে গর্ভবতী মহিলার জীবনের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে;
• তার মানসিক বা / ও শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে; বা
• গর্ভস্থ শিশুটি জন্মালে সে এমন শারীরিক ও মানসিক অস্বাভাবিকতায় ভুগবে যার ফলে সে গুরুতর প্রতিবন্ধী হয়ে পড়তে পারে।
• কিন্তু কোন রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক সৎ উদ্দেশ্যে যদি মনে করেন কোনও গর্ভবতী মহিলার প্রাণ রক্ষার জন্য জরুরী ভাবে এখনই গর্ভপাত করা প্রয়োজন তবে সেক্ষেত্রে একজন মাত্র রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকই গর্ভপাত করতে পারেন।
• যখন কোন গর্ভবতী মহিলা অভিযোগ করেন যে তিনি ধর্ষিতা হওয়ার জন্য তাঁর গর্ভসঞ্চার হয়েছে, সে ক্ষেত্রে এইভাবে গর্ভাবস্থা হওয়ার যন্ত্রণা ও উদ্বেগের কারণে সেই গর্ভবতী মহিলার মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতি হতে পারে, এই অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা গর্ভপাত করতে পারেন।
•স্বামী বা স্ত্রীর ব্যবহৃত জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন পদ্ধতি কার্যকরী না হওয়ার জন্য যদি গর্ভসঞ্চার হয়, তবে এই অবাঞ্ছিত গর্ভাবস্থা গর্ভবতী মহিলার মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে এই অনুমানের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা গর্ভপাত করতে পারেন।
• কোন মহিলার গর্ভাবস্থা এগিয়ে যেতে থাকলে সত্যিই তাতে-স্বাস্থ্য হানির ঝুঁকি আছে কিনা তা নিরূপণের জন্য গর্ভবতী মহিলার পরিবেশ পরিস্থিতি বাস্তবিক পক্ষে কী বা ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা বুঝে দেখতে হবে।
ক) ১৮ বছরের কমবয়সী মহিলার অভিভাবকের লিখিত অনুমতি ছাড়া গর্ভপাত করানো যাবে না;
অথবা ১৮ বছর বয়স হলেও কোন মহিলা যদি মানসিক প্রতিবন্ধী হন তবে তাঁর গর্ভপাত তাঁর অভিভাবকের লিখিত অনুমতি ছাড়া করা যাবে না।
খ) বিশেষ ক্ষেত্র বাদে, গর্ভবতী মহিলার অনুমতি ছাড়া কোন গর্ভপাত করানো যাবে না।
কোথায় গর্ভপাত করানো যাবে :
ক) সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত কোন হাসপাতালে,
অথবা
খ) সরকার বা সরকার গঠিত জেলাস্তর কমিটি কর্তৃক সাময়িকভাবে অনুমোদিত কোন জায়গায়। সরকার এই জেলাস্তর কমিটি তৈরী করবেন এবং এই কমিটির সভাপতি / সভানেত্রী হবেন চীফ মেডিক্যাল অফিসার অথবা ডিস্ট্রিক্ট হেলথ্ অফিসার। এছাড়া অন্যত্র নয় ।
আইনানুযায়ী গর্ভপাত না করলে শাস্তি :
ক) রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়া অন্য কেউ গর্ভপাত করলে তার কমপক্ষে ভারতীয় দন্ড সংহিতার বিধান অনুযায়ী দু'বছর আর সবচেয়ে বেশি সাত বছরের সশ্রম কারাদন্ড হতে পারে।
খ) সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা পরিচালিত হাসপাতাল অথবা সরকার বা সরকার গঠিত জেলাস্তর কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত জায়গা ছাড়া অন্য জায়গায় গর্ভপাত করলে তার কমপক্ষে দু'বছর থেকে সাত বছরের কারাদন্ড হতে পারে।
গ) উপরে বলে দেওয়া জায়গা ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় গর্ভপাত করালে সেই জায়গার মালিক, সংস্থার প্রশাসনিক প্রধান অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির কমপক্ষে দু'বছর থেকে সাতবছর সশ্রম কারাদন্ড হতে পারে।
জেনে রাখা দরকার
কোন মহিলাকে যদি কোন ব্যক্তি (এমনকি, স্বামী হলেও) উক্ত মহিলার অনুমতি ছাড়া গর্ভপাত করায় তাহলে ঐ মহিলা কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের (এন.জি.ও.) সাহায্য নিতে পারেন বা নিজ এলাকাভুক্ত থানায় এফ.আই.আর. করতে পারেন (যদি না তার ১৮ বছরের কম বয়স হয় বা মানসিক প্রতিবন্ধী হন) ।
কোন মন্তব্য নেই: