ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গাইড । কিভাবে যাবেন ? কিভাবে ডাক্তার দেখাবেন ?

আপনি কি বিখ্যাত সিএমসি (cmc vellore)হাসপাতাল যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ? এখানে সব তথ্য পেয়ে যাবেন 

সিএমসি  ভেলোর  (cmc vellore ) আসলে ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ ( CHRISTIAN MEDICAL COLLEGE )  - এটা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলোরে অবস্থিত । এটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ভারতের বিশিষ্ট প্রাইভেট হসপিটাল , মেডিক্যাল স্কুল  ও রিসার্চ ইন্সটিটিউট । সারা ভারতে এখানেই সবথেকে কম খরচে পেশেন্টদের উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া হয় । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে রুগীরা আসেন । আসুন জেনে নি ভেলোরের সঙ্কক্ষিপ্ত ইতিহাস - 

Cmc vellore bangla


সিএমসি হাসপাতালের ইতিহাস 

১৮৮০ সাল। আমেরিকা থেকে দক্ষিণ ভারতে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন স্কুল ছাত্রী ইডাসোফিয়া স্কুডার। এক ঘটনাবহুল রাতে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের তিনজন সন্তানসম্ভবা মায়ের সন্তান প্রসবে তিনি কোনও সাহায্য করতে পারবেন কি না। সে বিষয়ে কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায় ইডা কিছুই করতে পারেননি। পরদিন সকালে ইডা জানতে পারেন সেই তিন মহিলাই মারা গেছেন। তাঁর মনে হয় ভারতের মানুষের বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের সুচিকিৎসার জন্য ঈশ্বর তাঁকে আহ্বান জানিয়ে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।

ইডা আমেরিকা ফিরে যান। ১৮৯৯ সালে তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় স্নাতক হন। তারপর আবার ভারতে ফিরে আসেন। ১৯০০ সালে ভেলোরে এক শয্যার একটি ক্লিনিক খোলেন। ঠিক দু'বছরের মাথায় ১৯০২ সালে তিনি তৈরি করেন ৪০ শয্যার একটি হাসপাতাল। যে বাড়িতে বর্তমানে সিএমসি-র চক্ষু চিকিৎসা বিভাগ চলছে। ১৯০০ সালে একটি মাত্র শয্যা নিয়ে যে হাসপাতালের জন্ম হয়েছিল শতবর্ষ পার হয়ে এসে আজ তা শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ১৪৪টি স্পেশালাইজড বিভাগ নিয়ে এক বিশাল বনস্পতি। 

ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় তথ্য: ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (CMCH) ইডা স্কুডার রোড / ভেলোর / ৬32004 / তামিলনাডু।

মেইন এনকোয়ারি: ( 0416 ) 2282629

জেনারেল এনকোয়ারি : ( 0416 ) 228110 

পেশেন্ট রিলেটেড ফোন নং:  88000338855

হোয়াটসঅ্যাপ নং:  9385285957 

সিএমসি হেল্প ডেস্ক (কাটপাডি স্টেশন প্ল্যাটফর্ম নং-১) : 8300205252

ইমেল: callcentre@cmcvellore.ac.in

মেডিক্যাল সুপার: msoffice@cmcvellore.ac.in 

অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ওয়েবসাইট: www.cmch-vellore.edu

পাবলিক রিলেশন অফিসার: pro@cmcvellore.ac.in

অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও রেজিস্ট্রেশন: এখানে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দু'ভাবে করা যায়। সরাসরি হাসপাতালে পৌঁছে লাইন দিয়ে। তাতে সময় লাগে অনেক বেশি। দ্বিতীয়ত, বাড়ি বসে www. cmch-vellore.edu ওয়েব সাইট লগ ইন করে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সফল হলে একটি পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডি দেওয়া হয়। সেটি নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছে শতশত রোগীর লাইনে না দাঁড়িয়ে যদি প্রাইভেটে দেখাতে চান তাহলে প্রাইভেট পেশেন্ট ফেসিলিটি সেন্টারে (PPFC) সিলভার গেটে ৬০০ নং কাউন্টারে পৌঁছে গেলেই হবে।

যদি জেনারেলে দেখাতে চান তাহলে ইডা সোফিয়া স্কুডার সেন্টিনারি সেন্টার ফর ওম্যান অ্যান্ড চিলড্রেন (ISSCC) গেটে ২, ৩, ৪ নং কাউন্টারে হাজির হতে হবে। এরপর রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ভর্তি, টাকা জমা, রোগীর আইডি নং ইত্যাদি নেওয়ার পালা।

নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রাইভেট-৯০০ টাকা। রিপিট অ্যাপয়েন্টমেন্ট ৯০ দিনের মধ্যে ৩৫০ টাকা। অন্য ইউনিট বা বিভাগে ৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় দেখাতে ৮০০ টাকা। রোগী যদি অন্য ডাক্তারকে দেখাতে চান তাহলে দিতে হবে সেপারেট কনসালটেশন ফি বাবদ ৭০০ টাকা। একই বিভাগে তিন মাসের মধ্যে রি-ভিজিটে ৩৫০ টাকা। তিন মাস পর যে কোনওরকম রিপিট অ্যাপয়েন্টমেন্ট হলে ৮০০ টাকা। বর্তমানে ওয়ান্স-ইন-এ মান্থ ফি ৭০০ টাকা। জেনারেল পেশেন্ট নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ২৭০ টাকা। সব ধরনের রিপিট অ্যাপয়েন্টমেন্টে লাগে ১৪০ টাকা। সব টাকাকড়ি মেটানোর পর পেশেন্ট আইডি কার্ড ও হসপিটাল নং দেওয়া হয়।

প্রাইভেট জেনারেল ছাড়াও আছে আলফা ক্লিনিক। যে কোনও প্রাইভেট পেশেন্ট যদি দ্রুত দেখাতে চান তাহলে যোগাযোগ করতে হবে আলফা ক্লিনিকে। ফোন নং: 0426 - 2282299। এখানে প্রথমবার দেখানোর জন্য দিতে হবে ১৭৬৫ টাকা। (যার মধ্যে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বার দেখানো, চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্টের খরচ ধরা থাকে)। তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার দেখালে দিতে হয় ৩৮০ টাকা প্রতি ভিজিট। তিন মাস পেরিয়ে গেলে ১৪৭৫ টাকা। আলফা ক্লিনিকে কোনও আগাম বুকিং হয় না। শুধুমাত্র একদিন আগে বুকিং করা যায়। ইমার্জেন্সি রোগীর ক্ষেত্রে এত কিছু করতে হয় না।

অ্যাডমিশন বা ভর্তির পদ্ধতি: আউটডোরে প্রথমে জুনিয়র পরে সিনিয়র ডাক্তার রোগীকে দেখেন। তারপর প্রয়োজন মতো কোনও বিশেষজ্ঞ রোগীকে পরীক্ষা করেন। ডাক্তারবাবু ভর্তির নির্দেশ দিলে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৬১৯ নং ঘরে অ্যাডমিশন স্লিপ নিয়ে যেতে হবে। যেখানে CBMO-র সঙ্গে দেখা করতে হবে। টাকা পয়সা জমা দেওয়ার পর ভর্তি নিশ্চিত হবে। প্রাইভেট রোগীদের এরপর বেড খালি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। কারণ প্রাইভেট রুমের চাহিদা প্রচণ্ড। সেক্ষেত্রে অপেক্ষার পালা কয়েক দিন থেকে সপ্তাহ হতে পারে। রুটিন অ্যাডমিশন হয় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টের মধ্যে। ইমার্জেন্সি এবং মেটারনিটি অ্যাডমিশনে অবশ্য এত ঝামেলা পোয়াতে হয় না ৷ এসব ক্ষেত্রে সবসময় ভর্তি নেওয়া হয়। অ্যাডমিশনের সময় রোগীকে অবশ্য জানাতে হবে তিনি জেনারেল, প্রাইভেট না সেমি-প্রাইভেট রুমে ভর্তি হতে চান।

ইন পেশেন্ট বেড চার্জ প্রতিদিন: জেনারেল ওয়ার্ড ১ হাজার ৬৫ টাকা/ সেমি-প্রাইভেট রুম ইন জেনারেল ওয়ার্ড ১ হাজার ২১০ টাকা/ ৪ বেড উইথ অ্যাটাচাড বাথ ১ হাজার ২৯০ টাকা/ ৩ বেড অ্যাটাচাড বাথ ১ হাজার ৫৭৫ টাকা। ডাবল বেড অ্যাটাচড বাথ ২ হাজার ৪১৫ টাকা/ এসি ডাবল রুম ৩ হাজার ৯৩৫ টাকা/ নন-এসি সিঙ্গল বেড ৩ হাজার ২৬০ টাকা/ সিঙ্গল রুম মেন ব্লক ৪ হাজার ৪৯৫ টাকা/ এসি সিঙ্গল বেড ৫ হাজার ৫৫ টাকা/ সিঙ্গল বেড কর্নার রুম ৭ হাজার ৪১৫ টাকা/ ডিলাক্স রুম ৯ হাজার ১০০ টাকা/ প্রাইভেট এসি ডাবল বেড ৫ হাজার ৫৫ টাকা/ প্রাইভেট সিঙ্গল বেড ৭ হাজার ৫৮৫ টাকা/ এসি প্রাইভেট ডিলাক্স ৯ হাজার ৫৫০ টাকা/ সিসিইউ ৬ হাজার ৫০৬ টাকা/ আইটিইউ ৬ হাজার ৫০৫ টাকা।

মনে রাখবেন এই বেডচার্জ নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলে যায়। এজন্য সিএমসি এইচ ভেলোরে চিকিৎসা করাতে আনুমানিক কত খরচ হবে জানতে যে বিভাগে চিকিৎসা করাবেন তার প্রধানকে অথবা পাবলিক রিলেশন বিভাগে মেল করতে পারেন। এই হাসপাতালে দেখানোর সময় অবশ্যই একটি সরকারি ফোটো আইডি সঙ্গে আনতে হবে। বহির্বিভাগে ঢোকার সময় এটি সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৫২ নং ঘরে ওপিডি ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।

জি ১২ নং ঘরেও (ওপিডি রিসেপশন) সাহায্যের দরকার হলে যোগাযোগ করা যায়।

১৯২৭-১৯৩২ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ক্রিশ্চিয়ানো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীর অস্বাভাবিক চাপ বৃদ্ধির কারণে কর্তৃপক্ষ নতুন শাখা খোলার পরিকল্পনা নেয়। এরপর ২০০৫ সাল নাগাদ রানিপেট জেলায় কান্নিগাপুরম গ্রামে নতুন সিএমসি হাসপাতাল তৈরি শুরু হয়। ২০১৬ নাগাদ সেখানে ১৫০০ বেডের নতুন হাসপাতাল চালু হয়। বর্তমানে লেভেল ১ ট্রমা কেয়ার ছাড়া আরও বেশকিছু বিভাগ মূল হাসপাতাল থেকে রানিপেট ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়েছে। এখনও নির্মাণ কাজ চলেছে। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস তৈরি হয়ে গেলে আরও কিছু বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত করা হবে।

ক্রমবর্ধমান রোগী সংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে সিএমসি ভেলোর অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুরে ২০১১ সালে আরও একটি শাখা হাসপাতাল চালু করেছে। ভেলোর থেকে ২৯ কিমি দূরে চিত্তুরে সিএমসি ভেলোরের মতোই যাবতীয় পরিষেবা পাওয়া যায়। বর্তমানে ভেলোর শহরের আশপাশে মোট ৮টি ক্যাম্পাস মিলিয়ে প্রায় ৪৫০০ বেড আছে। তাতেও রোগীর সংখ্যা দিন দিন এত বাড়ছে যে চাইলেই ডাক্তার দেখানো সহজ নয়।



সিএমসি ভেলোরে ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপের ফলে অনেক সময়েই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে এবং ডাক্তার দেখাতে দেরি হয়। সেক্ষেত্রে যাওয়া যেতে পারে নারায়ণী হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে


ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গাইড । কিভাবে যাবেন ? কিভাবে ডাক্তার দেখাবেন ?  ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গাইড । কিভাবে যাবেন ? কিভাবে ডাক্তার দেখাবেন ? Reviewed by Wisdom Apps on সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.