হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন । মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম কি ? খোরপোশের নিয়ম ? দুই বিয়ের সাঁজা কি ? - বিস্তারিত জেনে নিন

hindu divorce law in bengali


হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন

সমাজে বিবাহ প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংসারে সামান্য সমস্যা আলোচনা করে সমাধান করে নেওয়া ভালো । কোনো কারনে সমাধান ও সংশোধনের অযােগ্য হলে বিয়ে ভেঙে দিয়ে বিচ্ছেদের চেষ্টা করা উচিৎ । তবে এটা শেষ রাস্তা ভেবে নিয়েই এগানো উচিৎ । এখানে জেনে নিন বিবাহ বিচ্ছেদের নিয়ম কি ?


বিশেষ ক্ষেত্রে স্বামী অথবা স্ত্রী নিম্নলিখিত কারণ দেখিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতে দরখাস্ত করতে পারেন।

যদি স্বামী বা স্ত্রীর কোন একজন

ক) তৃতীয় কোন ব্যক্তির সাথে স্বেচ্ছায় যৌন সংসর্গ করেছে।

খ) বিয়ের পরে যে কোন একজন অন্যের প্রতি নিষ্ঠুর ব্যবহার করেছে।

গ) একটানা অন্তত দুই বছর যে কোনাে একজন অন্যজনকে অবহেলা করে ফেলে চলে গেছে।

ঘ) হিন্দু ধর্ম ছেড়ে অন্য ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে।

ঙ) যে কোন একপক্ষের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এমন উদ্ভট আচরণ করছে, যে তার সাথে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

চ) দুরারােগ্য / নিরাময়-অযােগ্য ধরণের কুষ্ঠ রােগে ভুগছে।

ছ) ছোঁয়াচে নিরাময়-অযােগ্য যৌন রােগে ভুগছে।

জ) সন্ন্যাস গ্রহণ করে সংসার ত্যাগ করেছে।

ঝ) অন্তত সাত বছর ধরে নিখোঁজ।


তাছাড়া নিম্নলিখিত কারনেও ডিভোর্স নেওয়া যায় -

• কোর্ট থেকে আলাদা বাস করার ডিক্রি পাবার পর স্বামী-স্ত্রী অন্তত এক বছর এক সঙ্গে থাকেননি।

• যদি কেউ এক সঙ্গে থাকার অধিকারের জন্য ডিক্রি পান অথচ তৎসত্ত্বেও এক বছর সেই অধিকার কাজে লাগানাে হয় নি।


কিছু কিছু কারণে কেবল স্ত্রী বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন।

• স্বামীর আগের পক্ষের এক বা একাধিক স্ত্রী এখনও জীবিত, তাদের আইনি বিচ্ছেদ হয়নি।

বিয়ের পর স্বামী ধর্ষণ, সমলিঙ্গ যৌনসংসর্গ (পাশবিক আচার) ইত্যাদি বিষয়ে অভিযুক্ত।

• ইতিমধ্যে স্বামীর বিরুদ্ধে ভরণ-পােষণের অর্ডার পাশ হয়েছে এবং তারা এক বছরে

থাকছেন বা এক বছরের বেশি আলাদা ।

• বিয়ের সময় তার বয়স ১৫ বছরের কম ছিল, এবং ১৮ বছর বয়স হবার আগেই সে এই বিয়েতে অসম্মতি জানিয়েছে।

গেই সে এই বিয়েতে অসম্মতি


হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদের মামলায় বিকল্প প্রতিকার

ধর্মান্তর, সন্ন্যাস বা নিরুদ্দেশ বাদে, যদি অন্য কোনাে কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন। আদালত বিবেচনা করে পৃথক বসবাসের ডিক্রি দিতে পারেন।

পরস্পরের সম্মতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ

স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে জেলা জজের আদালতে বিয়ে ভাঙার জন্য দরখাস্ত করতে পারেন এই তারা এক বছর বা তার বেশি সময় ধরে আলাদা বসবাস করছেন, এক সঙ্গে থাকা অসম্ভব মনে হচ্ছে । অতএব, দুজনেই এ বিষয়ে একমত যে এ বিয়ে ভাঙাই উচিত।

১) দরখাস্তের তারিখের ছ'মাস পর, ও ১৮ মাসের ভিতর শুনানি হবে। দুজনের বক্তব্য শুনে ও দরখাস্তের বিবরণ যাচাই করে, আদালত বিচ্ছেদের ডিক্রি দেবেন।

২) বিয়ের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে বিচ্ছেদের জন্য দরখাস্ত করা যাবে না। অবশ্য হাইকোর্ট যদি মনে করে আবেদনকারী দুঃসহ কষ্টের মধ্যে রয়েছে তাহলে বিয়ের একবছরের আগেই আবেদন করার অনুমতি দিতে পারে, তবে বিয়ের একবছরের আগে ডিক্রি কার্যকর হবে না। এর কারণ হল সন্তানের জন্ম হলে তার স্বার্থে এবং উভয়পক্ষের মধ্যে নূতন করে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব কিনা দেখা হয়।

৩) বিয়ে বাতিল হয়ে গেলেও, ইতিমধ্যে কোনাে সন্তান জন্মালে তাকে বৈধ সন্তান বলেই ধরা হবে। তবে সেই সন্তানের নিজের বাবা-মার ছাড়া আর কোনাে পারিবারিক সম্পত্তির উপর অধিকার থাকবে না।

৪) বিয়ে বাতিল হলে উচ্চতর আদালতে আপিল করার সময়সীমার শেষে উভয় পক্ষই আবার বিয়ে করতে পারেন।


এই আইনের ভিত্তিতে যে কোনাে মামলা খুব তাড়াতাড়ি চলার নির্দেশ

- শুনানি দিনের পর দিন চলবে - এক নাগাড়ে

- নােটিশ দেবার দিন থেকে ছ'মাসের মধ্যে রায় দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

- আপিল হলে তা তিন মাসের মধ্যে মীমাংসার চেষ্টা থাকবে।


বিবাহ বিচ্ছদের ক্ষেত্রে গােপনীয়তা

মামলার ক্ষেত্রেঅ ক্ষেত্রে গােপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। কোন খবর ছাপা বা অন্যভাবে প্রকাশ করা বেআইনি। এক মাত্র আদালতের অনুমতি নিয়ে হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট যদি অনুমতি দেন তবে করা যাবে।


হিন্দু বিবাহ আইন একাধিক বিবাহ অর্থাৎ একের বেশি বিয়ের সাজা কি ?

আগের স্ত্রী বা স্বামী বেঁচে থাকতে, (যদি আইনি বিচ্ছেদ না হয়ে থাকে) দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে তাকে ‘বিগ্যামি’ বলে। হিন্দু আইনে দ্বিতীয় বিবাহ একটি অপরাধ এবং তা শাস্তিযােগ্য।

হিন্দু বিবাহ আইন একাধিক বিবাহের সাজা : ভারতীয় দন্ড সংহিতার ৪৯৪ ও ৪৯৫ ধারা অনুযায়ী হবে। ৪৯৪ ধারায় সাত বছরের জেল , ৪৯৫ ধারায় দশ বছরের জেল ও জরিমানা ।


হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী খােরপােষ ভাতার নিয়ম কি ?

স্বামী বা স্ত্রীর আবেদন যদি আদালত যথাযথ মনে করেন, বিচ্ছেদের ডিক্রির সঙ্গে থােক টাকা বা যাবজ্জীবন মাসােহারার নির্দেশ থাকতে পারে। অবশ্য পরে আবার আপিল করে তা রদবদল করা বা কাটিয়ে নেওয়া সম্ভব।

বৈধ হিন্দু বিয়ের যে ধারাগুলি আগে বলা হয়েছে তার কোন একটি ভঙ্গ করলে ক্ষেত্র বিশেষে একমাস থেকে দু'বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং এক হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা দুটিই একসঙ্গে হতে পারে।


সন্তানের দেখভাল

ছেলে-মেয়ে কার হেফাজতে থাকবে, লেখা পড়ার খরচ, মানুষ করার দায়িত্ব, এ সবের ব্যবস্থা আদালতের ডিক্রিতে থাকবে। সময়ে সময়ে তা নতুন করে বিচার করার সুযােগ থাকবে।


জেনে রাখা দরকার

বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য একজন উকিলের সাহায্যে যে এলাকায় কোন ব্যক্তির বিবাহ হয়েছিল সেই এলাকায়, অথবা বিবাদী যে এলাকায় বাস করছেন সেই এলাকায়, অথবা যেখানে দুজন

শেষ বসবাস করেছেন সেই এলাকায় মামলা করতে হবে।



হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন । মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম কি ? খোরপোশের নিয়ম ? দুই বিয়ের সাঁজা কি ? - বিস্তারিত জেনে নিন হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন । মিউচুয়াল ডিভোর্সের নিয়ম কি ?  খোরপোশের নিয়ম ? দুই বিয়ের সাঁজা কি ?  - বিস্তারিত জেনে নিন Reviewed by Wisdom Apps on অক্টোবর ২৩, ২০২২ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.