প্রারম্ভিক কথন ও সংজ্ঞা
প্রারম্ভিক কথন (Preliminaries) :
দেশের উন্নতির মূলে আছে উৎপাদন এবং উৎপাদন বিক্রির কেন্দ্রে আছে ক্রেতারা। আমাদের দেশের এই ক্রেতারা অধিকাংশই অশিক্ষিত ও অসংগঠিত। এই অশিক্ষা ও অসংগঠনের কারণে, বাজার থেকে সঠিক দামে সঠিক দ্রব্য বা সেবা ক্রয়ের ক্ষমতা তাদের সীমাবদ্ধ থাকায়, তারা ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত হয়। কারণ, ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের তুলনায় অনেক বেশি সংগঠিত থাকায় ক্রেতাদেরকে প্রতারিত করার সুযোগ তাদের হাতে অনেক বেশি।
স্বাধীনতার পর ভারতে দ্রুত শিল্পায়ন ও শিল্পোন্নয়ন ঘটে এবং পরবর্তীকালে সরকার বিশ্ববাজারের দরজা খুলে দিলে, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে এই ভেবে যে, নিম্নমানের জিনিস তৈরি করে, তারা বিদেশি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে পারবে না।
ব্যবসায়ীদের প্রতারণা ও প্রবঞ্চনার হাত থেকে ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্য 1986 সালে ভারত সরকার ক্রেতা বা ভোক্তা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্বাধীন ভারতে জনস্বার্থ সংক্রান্ত যেসব আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ক্রেতা বা ভোক্তা সুরক্ষা আইনটি, অন্যতম একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ক্রেতা বা ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য 1986 সালে প্রণীত আইনটি দু'বার সংশোধিত ও পরিমার্জিত করা হয়েছে – প্রথম সংশোধনটি হয় 1993 সালে ও দ্বিতীয়ত সংশোধনটি ঘটে 2002 সালে এবং এই সংশোধনী আইন 2003 সালের 15ই মার্চ থেকে কার্যকরী হয়েছে।
আইন চালু হওয়ার সময় ও স্থান (Time and Place of Introducing the Act):
1986 সালের 24 শে ডিসেম্বর থেকে এই আইনটি বলবৎ হয়। জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া এই আইন ভারতের সর্বত্র প্রযোজ্য।
এই আইনের উদ্দেশ্য (Purpose of the Act) :
1. এই আইন ক্রেতা বা ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ক্রেতাদের পরিষেবার জন্য তৈরি হয়েছে।
2. এই আইন ভোক্তাদের অধিকার সুরক্ষা ও উন্নতি বর্ধনের রক্ষাকবচ। ভোক্তাদের এই অধিকারগুলি নিম্নরূপ-
(a) কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করার ফলে, ক্রেতার জীবন ও সম্পত্তি বিপন্ন হলে, এই আইনের সাহায্য নেওয়ার অধিকার ক্রেতাদের আছে।
(b) অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিকার করার ও বিবেকবর্জিত শোষণের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এই আইনের সাহায্য নেওয়ার অধিকার ক্রেতার আছে।
(c) অধিকার সংক্রান্ত সচেতনার শিক্ষা গ্রহণ করার অধিকার ক্রেতাদের রয়েছে।
(d) প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে যতদূর সম্ভব বিভিন্ন ধরনের ও গুণমানের দ্রব্য ক্রয় করার অধিকার ক্রেতাদের আছে।
(e) অসাধু ব্যবসায়িক কার্যকলাপের কবল থেকে রক্ষা পাবার এবং ভোগ্যদ্রব্যের প্রকৃতিগত গুণ, পরিমাণ, শুদ্ধতা, গুণমান ও মূল্য সম্বন্ধীয় তথ্য জানবার অধিকার ক্রেতাদের আছে।
(f) ক্রেতাদের যথোপযুক্ত স্বার্থ রক্ষার জন্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ও সুবিবেচনা পাওয়ার অধিকার ক্রেতাদের আছে।
3. উপরোক্ত অধিকার ছাড়া, এই আইনের মূল উদ্দেশ্য হল, ক্রেতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সেই উদ্দেশ্যে ক্রেতা-সংশ্লিষ্ট বিবাদের মীমাংসার জন্য ক্রেতা পরিষদ গঠন করা।
4. ক্রেতাদের বিবাদের দ্রুত ও সহজ প্রতিকারের জন্য জেলাস্তরে, রাজ্যস্তরে ও জাতীয়স্তরে উপআদালত (Quari judicial) নামক নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্থাপন। স্বাভাবিক ন্যায়বোধের নীতি অনুসরণ করে এরূপ সংস্থা ক্রেতাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ জারি করতে এবং এই আদেশ অমান্য করলে শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।
সংজ্ঞাসমূহ (Definitions):
1. যথোপযুক্ত পরীক্ষাগার (Appropriate laboratory): যথোপোযুক্ত পরীক্ষাগার বলতে এমন কোনো পরীক্ষাগার বা সংস্থাকে বোঝায় যা一
(a) কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা স্বীকৃত; অথবা,
(b) কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি-নির্ধারক নির্দেশাবলি সাপেক্ষে রাজ্য সরকার দ্বারা স্বীকৃত; অথবা,
(c) পণ্যের ত্রুটি সংক্রান্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা বা বিশ্লেষণ চালাবার জন্য অন্য কোনো আইন দ্বারা সৃষ্ট এমন কোনো ধরনের পরীক্ষাগার বা সংস্থা যা কেন্দ্রীয় সরকার, বা রাজ্য সরকারের অর্থে বা আর্থিক সাহায্যে পরিচালিত।
2. শাখা কার্যালয় (Branch Office): শাখা কার্যালয় বলতে এমন কোনো
শাখা দপ্তরকে বোঝায়, যা প্রধান কার্যালয়ের মূল কাজকর্ম বা মোটের ওপর একই কাজকর্ম পরিচালনা করে।
3. অভিযোগকারী (Complainant): অভিযোগকারী বলতে বোঝায়-
(a) ক্রেতা বা ভোক্তা নিজে; অথবা
(b) 1956 সালের কোম্পানি আইন অথবা, অন্য কোনো প্রচলিত সমকালে কার্যকরী আইন দ্বারা নিবন্ধিত কোনো স্বেচ্ছামূলক উপভোক্তা সমিতি; অথবা,
(c) কেন্দ্রীয় সরকার বা কোনো রাজ্যসরকার যখন কোনো অভিযোগ দায়ের করে; অথবা,
(d) একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট বহু সংখ্যক ভোক্তা বা ক্রেতার মধ্য থেকে এক বা একাধিক ভোক্তা বা ক্রেতা।
2002 সালের ভোক্তা বা ক্রেতা (সংশোধিত) আইনে সংযোজিত হয়েছে যে, কোনো ভোক্তার মৃত্যু ঘটলে, সেই ভোক্তার আইনগত উত্তরাধিকারী বা প্রতিনিধিও অভিযোগকারীর আওতার অন্তর্ভুক্ত হবে।
4. অভিযোগ (Compleaint): অভিযোগ বলতে বোঝায়, অভিযোগকারীর লিখিত নালিশ এবং সেই নালিশের ধরণগুলো নিম্নরূপ-
(a) অসাধু ব্যবসায়িক কার্যকলাপ অথবা সীমায়িত বা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবসায়িক কার্যকলাপের জন্য ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সে নালিশ করতে পারে।
(b) ক্রীতপণ্যে বা কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ পণ্যে যদি এক বা একাধিক ত্রুটি থাকে, তা হলে ক্রেতা নালিশ করতে পারে।
(c) ক্রেতা ব্যবহার করতে দেওয়া বা গৃহীত পরিষেবায় সন্তুষ্ট না হলে অর্থাৎ সেবায় কোনো ঘাটতি থাকলে, ভোক্তা বা ক্রেতা অভিযোগ করতে পারে।
(d) কোনো আইন বা সমকালে কার্যকরী প্রচলিত কোনো আইনের দ্বারা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কোনো পণ্য বিক্রি করলে, বিক্রেতার বিরুদ্ধে ক্রেতার অভিযোগ করার অধিকার আছে।
(e) ব্যবহারের সময় জীবন ও নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর দ্রব্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে, ক্রেতাকে দ্রব্যের বিপজ্জনক ও ক্ষতিকারক দিকটি অবহিত করার সময়কালে কার্যকরী আইনানুগ দায়িত্ব বিক্রেতা পালন না করলে, এবং এর ফলে ক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সে বিক্রেতার বিরুদ্ধে নালিশ করতে পারে।
2002 সালের ভোক্তা বা ক্রেতা (সংশোধিত) আইন দ্বারা সংযোজিত অভিযোগের সংজ্ঞাকে আরও প্রশস্ত করার জন্য এই সংজ্ঞায় আরও কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সেগুলি নিম্নরূপ-
(A) কোনো পরিষেবা সরবরাহকারী, যদি কোনো অসাধু অথবা সীমায়িত বা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবসায়িক কার্যকলাপ গ্রহণ করে অথবা, নির্ধারিত দামের চেয়ে অধিক দামে যদি পরিষেবা বিক্রি করে অথবা, জীবন ও নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকারক কোনো পরিষেবা যদি সরবরাহ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে নালিশ করার অধিকার ভোক্তার থাকে।
5. ভোক্তা বা ক্রেতা (Consumer):
(a) ভোক্তা বা ক্রেতা হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যে প্রদানের (consideration) বিনিময়ে কোনো পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে। এরূপ প্রতিদান পূর্ণরূপে প্রদান করা যায় অথবা, প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায় বা, আংশিকভাবে প্রদান করা যায় বা, আংশিক প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রদান করা যায়। প্রতিদানের পূর্ণ প্রদান ছাড়া, সবরকম আংশিক প্রদানই কোনো বিলম্বিত মূল্যপ্রদান পদ্ধতিগত (detered payment system) চুক্তির মাধ্যমে করতে হয়। পণ্যের বণ্টন প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ের ভোগকারীকেই ক্রেতা বা ভোক্তা বলে। পুনরায় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অথবা উৎপাদন পদ্ধতির উপাদান হিসেবে, বাণিজ্যিক ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে কোনো পণ্য ক্রয় করলে, সেরূপ ব্যক্তিকে ক্রেতা বা ভোক্তা বলা যায় না।
(b) ভোক্তা বা ক্রেতা হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যে প্রতিদানের (consider-ation) বিনিময়ে কোনো পরিষেবা ক্রয় করে। পরিষেবা পাওয়ার বিনিময়ে এরূপ প্রতিদান পূর্ণরূপে প্রদান করা যায় অথবা, প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বা আংশিক প্রদান করে বা অবশিষ্ট অংশ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে করা যায়। প্রতিদানের পূর্ণ প্রদান ছাড়া সবরকম আংশিক প্রদানই কোনো বিলম্বিত মূল্যপ্রদান পদ্ধতিগত চুক্তির মাধ্যমে করতে হয়। প্রতিদান প্রদানকারী ব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি পরিষেবা ভোগ করলে, সেই ব্যক্তিকেও ক্রেতা বা ভোক্তারূপে গণ্য করা হয়।
2002 সালের ভোক্তা বা ক্রেতা (সংশোধিত) আইনের নতুন সংযোজন অনুযায়ী, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কোনো পরিষেবা ক্রয় করলে, সেই ব্যক্তিকে ক্রেতা বা ভোক্তা বলা যায় না।
6. ক্রেতা বা ভোক্তা বিরোধ (consumer despute): অভিযোগকারী যখন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে এবং সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি সেই অভিযোগকে অস্বীকার করে বা সেই অভিযোগের বিরোধিতা করে, তাহলে তা ক্রেতা বা ভোক্তা বিরোধ বলে গণ্য হবে। এই অভিযোগ পেশ ও অভিযোগ অস্বীকার দুই-ই লিখিতভাবে করতে হবে।
7. ঘাটতি (Deficiency) : কোনো ক্রয়-চুক্তি সম্পাদন দ্বারা, বা সমকালে কার্যকরী প্রচলিত কোনো আইন অনুসারে, পরিষেবার উৎকৃষ্টতা ও গুণগত মানের
মধ্যে কোনো দোষ, অসম্পূর্ণতা বা অপর্যাপ্ততা থাকলে তাকে ঘাটতি বলে।
8. ত্রুটি (Defect): ক্রয়-চুক্তি সম্পাদন দ্বারা বা সমকালে কার্যকরী প্রচলিত কোনো আইন অনুসারে, কোনো পণ্যের পরিমাণগত, গুণগত, কার্যকরী ক্ষমতা ও বিশুদ্ধতার মধ্যে কোনো ঘাটতি, দোষ বা অসম্পূর্ণতা থাকাকেই ত্রুটি (Defect) বলে।
9. জেলা ফোরাম বা ক্রেতা আদালত (Destriedt forum): যেখানে ক্রেতাদের পণ্য বা পরিষেবা সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা করা হয়, তাকে ক্রেতা আদালত বলে। ক্রেতা সুরক্ষা আইনের 9(a) নং ধারা অনুযায়ী ক্রেতা বিরোধ মেটানোর জন্য প্রতি জেলাতেই এক বা একাধিক ক্রেতা আদালত থাকে।
10. পণ্য বা দ্রব্য (Goods): 1930 সালের পণ্য বিক্রয় আইনে (Sale of
Goods Act, 1930) পণ্যের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। ওই সংজ্ঞা দেওয়া আছে। ওই আইনের 2(7) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, মামলাযোগ্য দাবি (actionable claim) ও বিহিত মুদ্রা ছাড়া, সব ধরনের অস্থাবর সম্পত্তিই পণ্য বলে গণ্য হবে।
11. উৎপাদক (Manufacturer): উৎপাদক বলতে এমন কোনো ব্যক্তিকে বোঝায় যে-
(a) কোনো পণ্য বা তার কোনো অংশ তৈরি করে বা উৎপাদন করে, অথবা,
(b) অন্য কোনো উৎপাদকের তৈরি পণ্যের ওপর তার নিজস্ব কোনো চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করে নিজের উৎপাদিত পণ্য বলে দাবি করে।
2002 সালের ক্রেতা বা ভোক্তা সুরক্ষা (সংশোধি) আইনে সংযোজিত হয়েছে যে, উপরোক্ত (b) ও (c) শ্রেণিভুক্ত পণ্যের উৎপাদক, সেই পণ্যসমূহকে নিজের বলে দাবি না করলেও, ওইসব শ্রেণির পণ্য তার নিজস্ব বলেই পরিগণিত হবে।
12. সদস্য (Member): সদস্য বলতে জাতীয় কমিশন (National Commission), রাজ্য কমিশন (State Commission) ও জেলা ক্রেতা আদালতের (District Forum) সভাপতি স্বয়ং ও অন্যান্য সদস্যবর্গকে বোঝায়।
13. জাতীয় কমিশন (National Commission): জাতীয় কমিশন বলতে বোঝায়, কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জাতীয় ক্রেতা বিরোধ প্রতিকার কমিশন (National Consumer Dispute Redressal Commission)।
14. বিজ্ঞপ্তিপত্র (Notification): সরকারি গেজেটে প্রকাশিত ইস্তেহারকে বিজ্ঞপ্তি পত্র বলে।
15. ব্যক্তি (Person): ব্যক্তি বলতে বোঝায়-
(a) একটি অংশীদারি কারবার-সেটি নিবন্ধিতই হোক বা অনিবন্ধিত।
(b) একটি যৌথ হিন্দু পরিবার।
(c) কোনো সমবায় সমিতি।
(d) 1860 সালের সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন আইন দ্বারা নিবন্ধিত ব্যক্তিবর্গের সমিতি।
16. সীমায়িত বা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যাবসায়িক কার্যকলাপ (Restrictive trade practice): সীমায়িত ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বলতে সেইসব ব্যবসায়িক কার্যকলাপকে
বোঝায়, যেসব কার্যকলাপের মাধ্যমে ক্রেতা কোনো পণ্য বা পরিষেবা কেনা, ভাড় 'নেওয়া অথবা, পাওয়ার জন্য পণ্য কোনো পণ্য বা পরিষেবা কেনার পূর্বশর্ত আরোপিত করা।
2002 সালের ক্রেতা বা ভোক্তা (সংশোধিত) আইনে সীমায়িত ব্যবসায়িক
কার্যকলাপের সংজ্ঞাকে আরো বিস্তৃত বা প্রসারিত করে বলা হয়েছে যে, কৌশল গতভাবে অসৎ উদ্দেশ্যে পণ্যের মূল্য বা পণ্য অর্পণের শর্ত বা পণ্য সরবরাহের জোগান নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যায়ভাবে ভোক্তার ওপর চাপ বা নিয়ন্ত্রণ সৃষ্টি করা এবং ওইসব কার্যকলাপের জন্য নির্ধারিত উত্তরণের বিলম্বের জন্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াও সীমায়িত ব্যাবসায়িক কার্যকলাপের আওতায় আসবে। এরপর পূর্বশর্ত আরোপকেই ব্যবসায়িক সীমাবদ্ধতা বলে।
17. সেবা পরিষেবা (Services): সেবা বা পরিষেবা বলতে সেইসব সেবামূলক
কাজকে বোঝায়, যেগুলি ক্রেতার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়, অর্থাৎ ক্রেতার কাছে যেসব সেবার উপযোগিতা আছে এবং যেসব সেবা ক্রেতা বা ভোক্তা অর্থের বিনিময়ে লাভ করে, সেইসব সেবাই আইনত সেবামূলক কাজ বলে গম্য হবে। কিন্তু যেসব সেবার জন্য কোনো মূল্য দিতে হয় না, অথবা, ব্যক্তিগত চুক্তিতে যে সেবাদান করা হয়, তাকে সেবা বলে গণ্য করা হয় না। আইনত সেবামূলক কাজ বলতে যেসব পরিষেবাকে বোঝায়, সেগুলির কয়েকটি উদাহরণ হল-ব্যাঙ্কিং, অর্থজোগান (financing), বিমা (insurance), পরিবহন (transport), বিদ্যুৎ বা অন্য কোনো শক্তির সরবরাহ (electrical or other energy) আমোদ-প্রমোদ ও বিনোদন, তথ্য সরবরাহ (Purveying of news or other information), থাকা খাওয়া (boarding and lodging) ইত্যাদি।
2002 সালের ক্রেতা বা ভোক্তা (সংশোধিত) আইনে পরিষেবার সংজ্ঞাকে আরও সুস্পষ্ট করার জন্য বলা হয়েছে যে, আইনের ব্যাখ্যার ওপরে উল্লিখিত যেসব পরিষেবার নাম করা হয়েছে, সেগুলো শুধুমাত্র উদাহরণ।
18. রাজ্য কমিশন (State Commission): রাজ্য কমিশন বলতে বোঝায়, রাজ্য সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ক্রেতা বিরোধ প্রতিকার কমিশন (State Consumer Disputer Redressal Commission)। বিজ্ঞপ্তি জারি করে, রাজ্য সরকারকে এই কমিশন প্রতিষ্ঠা বা স্থাপন করতে হয়।
19. অন্যায্য বা অনৈতিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপ (Unfair trade practice): কোনো পণ্য বা পরিষেবার বিক্রয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে, যে অন্যায্য পদ্ধতি বা প্রতারণামূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, তাকে অন্যায্য বা অনৈতিক ব্যবসায়িক কার্য বলে।
(a) অন্যায্য বা অনৈতিক ব্যবসায়িক কার্যকলাপ লিখিত হতে পারে, আবার মৌখিকও হতে পারে। এমনকি, এসব কার্যকলাপ প্রতিনিধি মারফতও হতে পারে। অর্থাৎ কোনো ব্যবসায়ী যদি অনৈতিকভাবে কোনো ভ্রান্তিমূলক বা প্রতারণামূলক
বিজ্ঞাপন (মৌখিক বা লিখিত যাই হোক না কেন) দেয়, তাহলে সেই কাজ অন্যায্য বা অনৈতিক কার্যকলাপ বলে গণ্য হবে। এ ধরনের অন্যায্য বা অনৈতিক কার্যকলাপ নিম্নরূপ হয়।-
(i) যদি পণ্যের উৎকর্ষতা, গুণগত মান, পরিমানগত মান, গুণ বা মূল্যগত পর্যায়, গুণ বা মূল্যগত পর্যায়, বস্তুগত মিশ্রণ, কেতাদুরস্ততা, মডেল বা প্রতিমান ইত্যাদি সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া হয়।
(ii) যদি পরিষেবার উৎকর্ষতা, গুণগতমান, পর্যায় ইত্যাদি বিষয়ে বিজ্ঞাপনে মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া হয়।
(iii) ব্যবহৃত হওয়া কোনো পুরোনো দ্রব্যকে পুনর্নির্মান বা নতুনভাবে মেরামত করে নতুন পণ্য হিসেবে যদি উপস্থাপিত করা হয়।
(iv) কোনো পণ্য বা পরিষেবা উৎপাদনের জামিনদার, অনুমোদন, সাফল্য, বিশিষ্টতা, গৌণভাবে সহায়কতা, ব্যবহারযোগ্যতা অথবা কোনো ফয়দা বা সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও এসব আছে বলে প্রচার করা।
(v) পণ্য বিক্রেতা বা পণ্য সরবরাহকারীর পণ্যের জমিদারি বা অনুমোদন বা সংযুক্তিকরণ ইত্যাদি না থাকা সত্ত্বেও, ওইসব আছে বলে প্রতিভাত করা।
(vi) কোনো পণ্য বা পরিষেবার উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন।
(vii) কোনো পণ্যের কার্যকারিতা, ফলপ্রদতা ও জীবনকাল সম্বন্ধে যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই যদি ওইসব গুণগত মানের জন্য জমিন (guarantee) ও নির্ভরপত্র (warranty) প্রদান সম্বন্ধে জনসাধারণকে আশ্বাস দেওয়া হয়।
(viii) জনসাধারণের কাছে এমনভাবে উপস্থাপনা করা হবে, যাতে সাধারণ অর্থে মনে হবে যে,
(a) কোনো পণ্য বা পরিষেবার জন্য জামিন অথবা নির্ভরপত্র দেওয়া হল;
(b) কোনো পণ্য পুনঃস্থাপন ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে দেওয়ার জন্য অথবা কোনো পরিষেবা পুরনরাবৃত্তি বা চালিয়ে যাবার জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল;
এবং উক্তরূপ জামিন বা নির্ভরপত্র বা প্রতিশ্রুতি বিভ্রান্তিকর ছাড়া আর কিছু নয় এবং ওইরূপ জামিন বা নির্ভরপত্রের শর্ত সম্পাদনের কোনো যুক্তিযুক্ত সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না।
(ix) কোনো পণ্য বা অনুরূপ পণ্য অথবা কোনো পরিষেবার বাজার দাম সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করা হয়।
(x) অপর কোনো ব্যক্তির পণ্য বা পরিষেবা সম্বন্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করে যদি তথ্য পরিবেশন করে যদি ওইসব পণ্য, পরিষেবা অথবা ওই ধরনের ব্যবসা সম্বন্ধে হেয় বা তাচ্ছিল্য করা হয়।
(b) দর কষাকষির মাধ্যমে বিক্রয় (Bargain sale): দর কষাকষির মাধ্যমে কোনো পণ্য বিক্রয় ও পরিষেবা সরবরাহ করার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও, যদি কোনো
ব্যবসায়ী ওইরূপ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংবাদপত্রে বা অন্য কোনো বিজ্ঞাপন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়, তাহলে তা অনৈতিক ব্যবসায়ী কার্যকলাপ হিসেবে গণ্য হবে।
(c) বিক্রয় প্রসার কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা (Breach of sales promotion programme) : বিক্রয় প্রসার ও বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী যদি বিনামূল্যে কোনো উপহার, পুরস্কার বা পরিতোষিক দেওয়ার কথা ঘোষণা করে, কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ঘোষণা কার্যকরী না করে, তাহলে ওই কাজকে অনৈতিক ব্যবসায়িক কাজ হিসেবে গণ্য করা হবে।
(d) পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে ভ্রান্তিকর বর্ণনা (False description of quality of goods): কোনো ব্যবসায়ী যদি কোনো পণ্যের উৎকর্ষের গুণগত মান যা, তার চেয়ে বেশি উৎকৃষ্টতা দাবি করে, তাহলে তা অনৈতিক ব্যবসায়ী কার্যকলাপ হিসেবে গণ্য হবে।
(e) মজুতদারি (Hoafding): কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে, দাম বাড়ানোর জন্য
কোনো ব্যবসায়ী যদি অবৈধভাবে বেশি পরিমাণ পণ্য মজুত রাখে, বা পণ্য নষ্ট করে ফেলে, তাহলে ওইসব কাজ অনৈতিক কাজ হিসেবে গণ্য হবে।

কোন মন্তব্য নেই: