ভারতীয় আইন অনুযায়ী কোনও মহিলাকে গ্রেপ্তারের নিয়ম কানুন কি ? জেনে নিন

 ভারতীয় আইন অনুযায়ী কোনও মহিলাকে গ্রেপ্তারের নিয়ম কানুন




অপরাধ! এই শব্দটা শুনলেই চোখ বন্ধ করলে শুধু কি পুরুষের মুখ মাথায় আসে, নাকি মহিলার। কেউ অপরাধ করেছে শুনলে সেখানে লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয় না সম্ভবত। তবে এখানে বলে রাখি নারী-পুরুষ অপরাধীর তালিকায় পুরুষদেরই বেশি দেখা যায়। কিন্তু নারীদের মাতৃরূপেন সংস্থিতা রূপ যে এখন আর এক নেই। যত দিন যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে ছবিটা। সব ধরণের অপরাধেই নারীদের আধিপত্য বাড়ছে। পারিবারিক স্তর থেকে আন্তর্জাতিক, মহিলাদের সমান অধিকারের মতো ‘অপরাধে’র দিক দিয়েও অনেকটাই এগিয়ে। 

তবে আজকের আলোচনা ভারতীয় আইনে মহিলাদের গ্রেপ্তারের কি কি নিয়ম কানুন রয়েছেআইন সবার ক্ষেত্রেই সমান কাজ করে। অপরাধ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। সে নারীই হোক কি পুরুষ। তাই কোনও ব্যক্তি অপরাধ করে থাকলে আইন অনুযায়ী তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া কোনও অপরাধ করলে প্রথম পদক্ষেপ হলো সেই ব্যক্তিটিকে/মহিলাটিকে গ্রেফতার করা।

এতে সেই ব্যক্তি অদূর ভবিষ্যতে আর কোনও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকেন। এছাড়া কখনো সেই ব্যক্তিকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্যেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করার পর সেই ব্যক্তিকে বিচারালয়ে হাজির করা হয়। এতে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যেতে পারে।

অভিযুক্ত যদি মহিলা হয়ে থাকেন, তাহলে নিষ্পক্ষ শুনানির জন্য তার সুরক্ষা করা হবে প্রথম বিষয়। এছাড়া নিশ্চিত করতে হবে যে ১৯৭৩ এর ধারা ৪৬(৪) অনুসারে সেই মহিলাকে গ্রেফতার করা যেতে পারে। এখানে আরেকটা জিনিস মুখ্য সূর্যাস্তের পর ও সূর্যোদয়ের আগে কোনও মহিলাকে গ্রেফতার করা যাবে না।

যদি কোথাও অন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে একজন মহিলা পুলিশ আধিকারিক দ্বারা রিপোর্ট লিখিত থাকতে হবে এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপ অর্থাৎ অনুমতি প্রয়োজন হয়।

মহিলা মাত্রেই যে অপরাধ করবে না, এমনটা নয়। তবে তাঁকে গ্রেফতার করার আগে তার সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়। যাতে পুলিশের মারফত কোনো দুর্ব্যবহার না হয়। অথবা কোনও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি না হয়, এটাও মনে রাখতে হবে।

দিনের বেলা একজন পুরুষ আধিকারিক অপরাধকৃত মহিলাকে গ্রেফতার করতে পারে। তবে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-

👉১৯৭৩ এর ধারা ৫০ এক সি আর পি সি অনুযায়ী গ্রেফতারের ওপর ভিত্তি করে যে সমস্ত অধিকারগুলি রয়েছে, সেগুলি দেখতে হবে।

👉গ্রেফতার হওয়া মহিলাকে গ্রেফতার করার আগে, পুলিশ আধিকারিককে মহিলার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবকে জানাতে হবে। যারা এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারবেন।

👉একজন মহিলাকে গ্রেফতারের আগে পুলিশ আধিকারিকের কর্তব্য যে, মহিলার অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকা।

👉সিআরপিসি ধারা ৫০ অনুযায়ী জামিনের অধিকার সম্পর্কে জানা।

👉 সিআরপিসি ধারা ৫৬ অনুযায়ী কোনরকম দেরি না করে মেজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া ২৪ ঘন্টার বেশি কোনও মহিলাকে জেল হেফাজতে রাখা অবৈধ।

👉ধারা ৭৬ অনুযায়ী ২৪ ঘন্টা বা তার বেশি সময় জেল হেফাজতে না রাখার অধিকার।

👉আইনি পরামর্শের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ রাখার অধিকার। যা গ্রেফতারের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়।

👉গ্রেফতারের আগে মারপিট, হাতাহাতি করে হাতকড়া পড়ানো অবৈধ মনে করা হয়।

👉একজন মহিলাকে গ্রেফতার করার পর একজন মহিলা পুলিশই পারে সার্চ করতে। আর সেই সার্চ করার প্রক্রিয়া হবে খুবই ভদ্রসম্মত। মহিলার সম্মানহানি না করে।

👉একজন পুরুষ পুলিশ আধিকারিক মহিলা অপরাধিকে সার্চ করতে পারবেন না। তবে মহিলার ঘরে অনুসন্ধান করতে পারেন।

👉গ্রেফতারির সময় একজন ডাক্তারকে দিয়েও সার্চ করানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে তার অধিকার রয়েছে।

👉 অভিযুক্ত মহিলা অপরাধীর আইনি সহযোগীতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

👉 এই সময়, পুলিশ আধিকারিক মহিলাকে গ্রেফতার করার সময় নিয়ম মানতে না পারলে মহিলা অপরাধী উকিলের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

👉 অভিযোগের সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেটকেও সম্বোধন করতে পারে। যাতে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

👉 এছাড়া যদি কোনও মহিলা অপরাধীকে অবৈধভাবে গ্রেফতার করা হয়, বা গ্রেফতারের সময় সম্মানহানি হয় তাহলে অভিযুক্ত মহিলা তার অধিকারগুলো ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে পারেন।

অপরাধমূলক কাজের জন্য মহিলাকে গ্রেফতার করা হলে, উপরিউক্ত সমস্ত অধিকারগুলি সম্বন্ধে অবগত থাকতে হবে। কারণ এক্ষেত্রে যদি আপনার আইনি অধিকার বিরুদ্ধাচরণ হয়, তাহলে আপনি কোনও আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারবেন।


লিখেছেন- বৈশাখী নার্গিস

ভারতীয় আইন অনুযায়ী কোনও মহিলাকে গ্রেপ্তারের নিয়ম কানুন কি ? জেনে নিন  ভারতীয় আইন অনুযায়ী কোনও মহিলাকে গ্রেপ্তারের নিয়ম কানুন কি ? জেনে নিন Reviewed by Wisdom Apps on সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২২ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.