হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী বিবাহ একটি ধর্মীয় সংস্কারমূলক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। শাস্ত্রীয় মতে হিন্দু বিবাহ নানা প্রকারে হতে পারে। তবে অগ্নি সাক্ষী রেখে সপ্তপদীসহ বিবাহই সাধারণভাবে মেনে চলা হয়। স্বাধীনতার পরে সমাজের নানা কু-প্রথা বদল করে হিন্দু মহিলাদের উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়ার জন্য হিন্দু বিবাহ আইন পাশ হয় ১৯৫৫ সালে।
এই আইনের আওতায় যাঁরা আসেন :
(ক) জন্মসূত্রে যাঁরা হিন্দু (অর্থাৎ যাঁরা খৃষ্টান, মুসলিম, ইহুদি বা পার্সি নন; এক্ষেত্রে বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মের লোকেদেরও হিন্দুদের মধ্যে ধরা হবে);
(খ) যে কোনও সন্তান (বৈধ/অবৈধ) যার বাবা / মায়ের মধ্যে একজন হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মাবলম্বী, অথবা এইসব সম্প্রদায়ের বাবা / মায়ের দ্বারা পালিত হয়েছে;
(গ) যিনি স্বেচ্ছায় অন্য ধর্ম ছেড়ে হিন্দু, বৌদ্ধ বা শিখ ধর্ম গ্রহণ করেছেন। বিশেষ দ্রষ্টব্য : তফসিলি জনজাতির মানুষ এই আইনের আওতায় পড়বেন না । তফসিলি জনজাতির বিয়ে তাদের নিজের নিজের প্রচলিত প্রথা ও রীতি অনুযায়ী হয়।
হিন্দু মতে আইনসিদ্ধ বিয়ে কখন হতে পারে ?
(ক) বর ও কনে দুজনেই হিন্দু ;
(খ) বিয়ের সময় দুপক্ষের কারোরই আগের পক্ষের স্ত্রী বা স্বামী নেই (মৃত বা আইনতঃ বিচ্ছেদ হয়েছে);
(গ) দুপক্ষের উভয়েরই বিয়েতে বৈধ সম্মতি না দেওয়ার মত মানসিক অসুস্থতা নেই এবং সন্তান প্রজননে সক্ষম;
(ঘ) দুপক্ষের কেউই পাগল নন বা ঘন ঘন মৃগী রোগে আক্রান্ত হন না;
(ঙ) বিয়ের সময় বরের বয়স অন্ততঃ ২১ বছর ও কনের বয়স অন্ততঃ ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে;
(চ) বর কনের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেও তার দরুন বিয়ে নিষিদ্ধ হবে না, যদি তাদের মধ্যে প্রচলিত রীতি বা প্রথা অনুযায়ী তা আপত্তিকর না হয়;
(ছ) প্রথামত হিন্দু অনুষ্ঠানের মধ্যে অবশ্যই অগ্নিসাক্ষী রেখে সপ্তপদী হওয়া প্রয়োজন । সপ্তম পদ নেওয়া হলেই বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ধরতে হবে ;
(জ) শহরে বিবাহ করতে গেলে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়ে বিবাহ রেকর্ড করতে হবে। গ্রামে বা পঞ্চায়েত এলাকায় বিবাহ করতে গেলে পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। হিন্দু বিবাহের জন্য যে আলাদা ফর্ম আছে, তাতেই সই করতে হবে;
(ঝ) যদি কোনও পুরুষ ও মহিলা একই ছাদের তলায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাস (সহবাস) করেন, তাহলে তাঁদের স্বামী-স্ত্রী হিসাবেই গণ্য করা হবে।
বিবাহ নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক -
পশ্চিমবঙ্গে এখন সব বিয়ে রেজিস্ট্রি করা আবশ্যিক। হিন্দু মতে বিয়ে হলে আগে রেজিস্ট্রি না করলেও চলত কিন্তু ১৯৯৯ থেকে আর তা সম্ভব নয় । 'লিখিত রেকর্ড' থাকতেই হবে ।
বিয়ে বাতিল -
(ক) যদি বিয়ের পরে জানা যায় যে আগের পক্ষের স্ত্রী বা স্বামী জীবিত ও বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি।
(খ) বা দুজনের মধ্যে একজনের বিয়ের সময় মাথা খারাপ ছিল বা মৃগী রোগ ছিল।
(গ) শারীরিক কারণে যৌন সঙ্গমে অক্ষমতা ।
(ঘ) এক বছরের মধ্যে আদালতে অভিযোগ করা হয় যে অভিভাবকের সম্মতি জোর করে আদায় করা হয়েছিল। এক বছরের বেশি হলে বিয়ে বাতিল হবে না ।
(ঙ) বিয়ের সময় কনের গর্ভে অন্য কোনো পুরুষের সন্তান ছিল। এই বিষয়টি বিয়ের সময় জানা ছিল না।
কিন্তু –
উপরের কোনো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও যদি তাঁরা ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় স্বামী-স্ত্রী হিসাবে সহবাস করে থাকেন, (এক বাড়িতে থাকলেই কোর্ট তাই ধরে নেবে) তাহলে বিয়ে বাতিল হবেনা ।
দাম্পত্যের অধিকার -
যদি অকারণে বা তুচ্ছ কারণে, স্বামী বা স্ত্রী হঠাৎ ঘর ছেড়ে চলে যায়, তবে অন্য জন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে পারে জেলা আদালতে । যে ছেড়ে চলে গেছে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে কারণগুলো সত্যিই তুচ্ছ নয় । তা না হলে কোর্ট আদেশ দেবেন ঘরে ফিরে যেতে ।
আদালতের অনুমতিতে আলাদা - পৃথক বসবাস -স্বামী বা স্ত্রী আদালতে লিখিত জানাবে কেন তাদের এক সাথে ঘর করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে । সেই বুঝে আলাদা থাকার অনুমতি-পত্র বা ডিক্রি দেবেন আদালত । এই ডিক্রি থাকলে সহবাসের অধিকার আর থাকে না । তবে নতুন করে আবেদন করে সে ডিক্রি নাকচ করানো যায়।
হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ -সহজ ভাষায় খুঁটিনাটি
Reviewed by Wisdom Apps
on
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
Rating:
Reviewed by Wisdom Apps
on
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
Rating:

কোন মন্তব্য নেই: